শহীদ ভালবাসা

সক্কাল সক্কাল হিঁজড়ের ঠেলায় ঘুমটা ভেঙে গেল৷ রাহুল উঠে বসে একটু বিরক্তির সুরেই বলল..
— সুবহ সুবহ পইসা মাঙ্গতা হ্যায়? দিখতা নেহি সব সো রহা হ্যায়?
ট্রেনে আবার এদের দাপটই আলাদা৷ যেন বাপের জমিদারি৷ খাজনা আদায় করতে উঠেছে৷ সকালে এদের মুখ দেখাটা সবাই বলে নাকি শুভ নয়৷
যাই হোক পকেট থেকে দশটা টাকার নোট বের করে একরকম ছুঁড়ে দিল ওদের দিকে৷
নাঃ , এত কথার পরেও বৃষ্টি জাগেনি, কি সুন্দর বাচ্ছাদের মত সারল্য মুখে৷ এখনি ডাকব না, আর একটু ঘুমাক৷ রাহুল এবার জানালার পাশে বসে পড়ে৷ সকালের সূর্যের আলোয় দূরে পাহাড়ের সুসজ্জিত শোভা দেখতে দেখতে হঠাৎ হৃদয়ের অপূর্ন ইচ্ছেগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে৷

রাহুলের খুব ইচ্ছে ছিল আর্মি অফিসার হবার, কিন্তু তার বাবা কিছুতেই মত দেননি৷ একমাত্র ছেলেকে চোখের আড়াল করতে চায়নি তার মা ও৷ পড়াশুনোয় যদিও বরাবর বেশ ভালই ছিল রাহুল৷ যাই হোক সেই আর্মির উর্দি পরা আর দেশের জন্য লড়াইয়ের স্বপ্নটা বাবা মায়ের ভালবাসার গৃহে বন্দী হয়েই রয়ে গেল৷

ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হল রাহুল৷ বৃষ্টির সাথে প্রেম সেই কলেজের প্রথম বছর থেকেই৷ তার পর ভালোবাসার সাতটি বসন্ত পেরিয়ে এই মার্চের ১২ তারিখে বিবাহ বাঁধনে বেঁধে যায় দুটি প্রান৷ হানিমুনের জন্য আগে থেকেই ট্রেনের টিকিট বুক৷ একটা নতুন জীবনের সুন্দর প্রারম্ভের জন্য দেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাটাই বেছেছে দুজনে, কাশ্মীর৷ হঠাৎ কাঁধে একটা পরিচিত হাতের ছোঁয়া৷
  — "কি গো, কি ভাবছ অমন করে বাইরে তাকিয়ে?"
বৃষ্টি উঠে গেছে৷ বেশ কিছু কথার পর দুজনেই মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়৷ এবার ট্রেন থেকে নামার সময় হয়ে গেছে৷
ট্রেন থেকে নেমে সারাদিন গাড়িতেই কাটল৷ অবশেষে বিকেল বেলা গাড়ি থামল শ্রীনগরে৷ হোটেল বুক করাই ছিল, তাই ঢুকেই একটু ফ্রেশ হয়ে দুজনেই গা এলিয়ে দিল বিছানায়৷ সারাদিন যা ধকল গেল৷
ঠান্ডা লাগছে বেশ, বৃষ্টি লাল-সবুজে মেশান দামি কম্বলটা গায়ে নিয়ে বেশ খুশিই হল৷ এবার শুরু হল রাহুলের খুনসুটি৷ কখনো সালোয়ারের ওড়নাতে একটু টান, কখনো বা কোমরে একটু সুড়সুড়ি৷ আদুরে স্বরে ঠোঁটে স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে বৃষ্টি তাকে জড়িয়ে ধরে বলল..
— "এই, তোমার মনে আছে ? যখন তুমি চাকরি নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে গেলে আর আমি রইলাম কলকাতায়৷ ফোনে কত প্ল্যান করতে, হানিমুনে এখানে আসবার, আরও কত কি...৷ তোমার তো আবার রাত হলেই এসব কথা মনে পড়তো৷ "

রাহুল একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে..
— "আরও কি কি হুমম?"
— "ধ্যাৎ অসভ্য৷"
কথায় কথায় ডিনার করার সময় হয়ে গেছে৷ বৃষ্টি বলল..
—"এই আমার খুউউব ঘুম পাচ্ছে৷ আমি আর রাত্রে কিচ্ছু খাবনা"
— "এক্খুনি ঘুমিয়ে যাবে?"
রাহুল চায়না এত তাড়াতাড়ি ঘুমোতে৷ আজ দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরে হৃদয়ের গোপন ইচ্ছেটা পূর্ণ হল৷ সে চায় এই রাত্রির প্রতিটি মুহুর্ত জীবনের স্মৃতির পাতায় ভালোবাসার উষ্ন কালি দিয়ে লিখে রাখতে৷
আবেগে ভেসে যায় সর্পসম জড়ান দুটি শরীর৷ ঠোঁট মিশে যায় ঠোঁটে, সুখের শিখরে যেতে যেতে ঘুমিয়ে পড়ে দুজনেই৷
সক্কালেই উঠে দুজনে রেডি হয়ে গাড়ি করে সোজা ডাল লেক৷ সেই "মিশন কাশ্মীর" সিনেমায় দেখা৷ রাহুল অলরেডি মনে মনে নিজেকে হৃত্বিক আর বৃষ্টিকে প্রীতি জিন্টা ভাবতে শুরু করে দিয়েছে৷ নৌকোতে বসে বৃষ্টি গুনগুন করতে লাগল..
— "চুপকে সে শুন, ইস পল কি ধুন..."

আজকের দিনটা দারুন কাটল দুজনের, ডাল লেকে শিকারাতে জলভ্রমন আর রকমারি ফুলের চাষ দেখে৷ আজ দিনের শেষে ফের হোটেলে ফিরে যাওয়া সুন্দর স্মৃতিগুলি সঙ্গে নিয়ে৷

পরদিনে ভোরে উঠেই টাটা সুমোতে চড়ে ফের রওনা নতুন গন্তব্যের পথে৷ গাড়ির জানালার ধারে বসে বরুফে পাহাড়ের সৌন্দর্য যেন প্রেমকে আরও গভীর করে তোলে৷ রাহুল একটু কাছে টেনে নেয় বৃষ্টিকে৷ অবশেষে পাঁচঘন্টা পর গাড়ি থামল পেহেলগাও এর একটি গেস্টহাউসের সামনে৷ যায়গাটা দারুন, যেন কোন সুন্দরী অপ্সরার সুন্দর ভাবনায় সাজান একটি পাহাড়ি গ্রাম৷ সব গাছে বরফের চাদরের আস্তরন যেন শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে প্রকৃতির মাঝে৷
রাহুল আর বৃষ্টির আনন্দ যেন আর ধরেনা৷ একটু কিছু খেয়েই বেরিয়ে পড়ল পায়ে হেটেই, নির্জনে, শুধু দুজনে দুজনার হাত দুটি ধরে৷ হেঁটেই চলেছে, আজ আর কথার প্রয়োজন বোধ করছেনা কেউই৷ শুধু শক্ত করে হাত ধরে বরফে চলা, আর কি চাই৷
হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ চলে এসেছে৷ সন্ধে নামবে ক্ষনিক পরেই৷ রাহুলের এবার একটু ভয় ভয় করছে, তাই বৃষ্টিকে বলল...
— "এই, চল এবার ফিরে যাই৷ অনেক দূরে চলে এসেছি৷ কেমন যেন লাগছে যায়গাটা৷"
এই নিস্তব্ধতা খুব ভয়াবহ৷ সামনেই দেখে এক মিলিটারি ক্যাম্প৷ টর্চ হাতে এক ফৌজি ..
— "ইয়াহা ক্যা কর রহে হো? কৌন হো তুমলোগ?"
রাহুল বলল..
— "হমলোগ পেহেলগাও ঘুমনে আয়ে হ্যা সরজি৷ চলতে চলতে ইয়াহা তক আ গয়ে৷"
রাহুলকে বলল এখানে জায়গাটা সুবিধের নয়৷ এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরতে হবে৷ কালই কিছু জঙ্গি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে৷
ফৌজি বলল..
— "অভি ইয়াহাসে গাড়ি ভি নেহি যা সকতা৷"
বরফে গাড়ি যাবার রাস্তা বন্ধ৷ এখন ভাবছে কেন যে এভাবে আসতে গেল... ৷ হেঁটে ফেরাটাও নিরাপদ নয়৷ অগত্যা আর্মি ক্যাম্পই ভরসা৷ সামনে ওয়াচটাওয়ারে আলো জ্বলছে৷
হঠাৎ এক জওয়ান ছুটতে ছুটতে এসে খবর দিল কিছু জঙ্গির গতিবিধি টের পাওয়া গেছে৷ ফৌজি জোর গলায় ধমকের সুরে বলল...
— "তুমলোগ দৌড়কে ক্যাম্প মে ঘুসো৷ বাহাদুর, ইনলোগোকো লে কর যাও৷"
তিনজনে মিলে দৌড়াতে শুরু করল৷ একটু দূরেই আর্মি ক্যাম্পের আলো দেখা যাচ্ছে৷ বরফের উপর দৌড়োতে কষ্ট হচ্ছে বৃষ্টির৷ রাহুল ভয় কাটানোর জন্য বলল..
— "আর একটুখানি, এই তো চলেই এসেছি৷
বাহাদুর হাতে "এ কে ৪৭" হাতে দুজনকে গার্ড করতে করতে চলেছে৷
হঠাৎ গুলির আওয়াজ শুরু হল, বৃষ্টি ভয়ে হোঁচট খেয়ে বরফে পড়ে গেল৷ রাহুল প্রাণপনে চেষ্টা করছে বৃষ্টিকে তোলার৷ পালটা গুলির আওয়াজ আরও তীব্র হয়ে আসছে৷
— "ওঠ বৃষ্টি ওঠ, আর একটু৷"
এদিকে বাহাদুর দুজনকে কভার করতে করতে বলল..
— "উঠিয়ে মেমসাব , জলদি উঠিয়ে৷ আতঙ্কবাদী লোগ সামনে আ গয়া হ্যায়৷"
গুলির আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির৷ বরফের ভেতর আটকে যাওয়া পা টা বেরচ্ছেনা কিছুতেই৷ বাহাদুরের বন্দুকটাও এবার আওয়াজ করে উঠল৷ সঙ্গে বাহাদুরের গলার আওয়াজ..
—"জয় বজরঙ্গবলী....."
তারপর আবার গুলির আওয়াজ৷ কোনমতে বৃষ্টিকে টেনে তুলেছে রাহুল৷ হঠাৎ সহস্র গুলির শব্দের মাঝে বাহাদুরের আওয়াজ.... আ..আ..আ..
শেষ, সব শেষ৷ রাহুলের চোখের সামনে এক ফৌজির জীবন শেষ৷ বৃষ্টিকে বাঁচাতে হবে৷ ছুটতে লাগল দুজনে৷ হঠাৎ একটা গুলি ছিটকে এসে বৃষ্টির বুকের একটু নিচে৷ বৃষ্টির মুখের শেষ শব্দ, রাহুউউউল.....
—"বৃষ্টি, চোখ খোল৷ আর একটু গেলেই ক্যাম্পে পৌছে যাব৷ বৃষ্টি......"
রাহুলের চোখে বন্যা নেমে এল৷ মূহুর্তে ভাবল এই জঙ্গিরাই কত নিষ্পাপ বৃষ্টিকে হত্যা করেছে৷
—"নাঃ, এদেরকে আমিও ছাড়ব না৷"
সামনেই বাহাদুরের নিথর দেহের কাছে পড়ে থাকা বন্দুকটা উঠিয়ে নিল রাহুল৷ দেখল সামনে তিনজন জঙ্গি ছুটে আসছে ক্যাম্পের দিকে৷ গুলি চালাল রাহুল৷ পালটা কয়েকশ গুলি ছুটে এল রাহুলের দিকে৷ গুলি খেয়ে পড়ে গেল রাহুল বরফের মধ্যে, খুজতে লাগল বৃষ্টির নিথর দেহটাকে৷ পেয়েছে এবার হাতটা ধরতে৷ আর ছাড়বেনা কোনদিন সে বৃষ্টির হাত৷ রাহুলের মুখে শেষ শব্দ... জয় হিন্দ.... ৷ বরফে মিশে গেল বৃষ্টির রক্তের সাথে তার রক্ত, মূহুর্তেই শুরু হল বরফের বৃষ্টি৷ রাত্রির স্নো ফলে চির নিদ্রায় নিদ্রিত হল ভালবাসা৷ দুটি শহীদের বেদী সজ্জিত বরফে৷

                       ✍প্রভাত ঘোষ...

আবীরে তৃপ্তি

ভোরের বেলা হঠাৎ দরজায় কলিং বেলটা বেজে উঠল, কৃংকৃং ৷ নন্দিনী রাত্রেই শ্বসুরবাড়ি ছেড়ে চিরদিনের মত চলে এসেছে, আর ফিরবেনা কক্ষনো ওই মাতাল বরটার কাছে৷ শুধু কি মাতাল, নাঃ ধর্ষকও বটে৷ শ্বসুরটাও তো কতবার সুযোগ খুজেছে তাকে গ্রাস করবার৷ প্রতিরাতে বরের মদের গন্ধের শরীরটাকে চাপিয়ে নিতে হয়েছে নিজের গায়ে৷ স্বেচ্ছায় নয়, শুধু একটা বর্বর জন্তুর পাশবিক প্রবৃত্তি শান্ত করতে৷ ইচ্ছে না হলেও না বলা যাবেনা, বললেই চামড়ার বেল্টের মারে ব্লাউজ খোলা পিঠে বসবে দগদগে রক্ত জমার দাগ৷ নাঃ , আর ওই পিশাচের সাথে থাকতে পারবেনা সে৷

মা দরজা খুলতেই চোখের জলে ভেঙে পড়ল নন্দিনী৷ 
— "আর ফিরে যাবনা মা, কক্ষনো না৷"
পিঠের দাগগুলো এখনো চিৎকার করে কাল রাত্রের নির্মম অত্যাচারের কথা বলছে৷ মা চোখের জল মোছাতে মোছাতে দুয়োর থেকে বাড়ির ভেতর নিয়ে সোফায় বসাল৷ 
— "আর যেতে হবেনা মা তোকে, আমার মেয়ে তুই, আমার কাছেই থাকবি৷ কোন অভাব নেই এখানে৷ তোর বাবার এতবড় ব্যাবসা৷ "
বেশ কিছুদিন কেটেগেল, এখন একটু সুস্থ হয়েছে শরীরটা৷ সিঁথিতে সিঁদুর পরেনা আর, কার জন্যই বা পরবে ? মন থেকে আজ মুছে ফেলতে চাইছে নিজের অতীত৷
এমনিতে বেশ সুন্দর দেখতে নন্দিনী৷ শরীরে এক স্নিগ্ধ মাদকতা৷ শুধু ভুল করেছিল একটাই৷ এক বেকার একগুঁয়ে ছেলের প্রেমে পড়েছিল৷ থাক আজ সেসব কথা৷ এখন কিছুটা সামলে নিয়েছে নিজেকে, কিন্তু গভীর রাতে যখন ঘুম আসেনা চোখে, তখন মনের অপূর্ণ বাসনাগুলো ঘিরে ধরে৷ ভালবাসার আদর, সুখের চাদর , কোনটাই সে পায়নি বিয়ের পর৷ প্রেম এবং বাস্তবের ফারাকটা জীবন অনেকখানি শিখিয়ে দিল৷
আজ নন্দিনীর বাবা বাড়ি ফিরবেন৷ ব্যাবসার কাজে এক সপ্তাহের জন্য বাইরে ছিলেন৷ যদিও ফোনে সব ঘটনাই শুনেছেন৷
এই কথাটা মনে পড়তেই মনের ভেতরটা ছ্যাত্ করে উঠল৷ বাবার সাথে তার কেরানী আবীরও আসবে বাড়িতে৷ আবীরকে কত অপমান করেছিল সে একদিন৷ কারন প্রথম প্রথম নন্দিনীকে দেখে চেয়েই থাকত তার দিকে৷ তাই একদিন বলেছিল..
— "কি , কাজ নেই , শুধু মেয়ে দেখলেই ঘুরঘুর করা ৷ বলব বাবাকে? চাকরি করার ইচ্ছে নেই নাকি ?"
খুব অপমান করেছিল৷ আজ ভাবে , ওভাবে না বললেও হত৷ 
কদিন আগেই মার্চ মাস শুরু হয়েছে৷ আজ রবিবার, দুপুর প্রায় বারটা বাজে৷ স্নান করে হলদে শাড়িটা পরে ভেজা চুল গামছায় ঝাড়তে ঝাড়তে বাড়ির সামনের বারান্দায় দাঁড়াল নন্দিনী৷ গাছের ফাঁক দিয়ে হালকা রোদ ছুঁয়ে যাচ্ছে নরম গাল৷
চোখটা একটু ঘোরাতেই দেখতে পেল বসার ঘরে তার বাবার সাথে সুঠাম চেহারার এক যুবক সোফায় বসে৷ স্পাইক করা চুল, গালে হালকা ট্রিমিং করা দাড়ি, চোখে আত্মবিশ্বাস৷ সব মিলিয়ে আকর্ষন করার মতো চেহারা৷ কিন্তু, কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে৷ হ্যা, এইতো সেই আবীর৷ সেই উস্কোখুস্কো তেল চিপচিপে চুল, এক সপ্তাহের না কাটা দাড়ি, আজ কতো বদলে গেছে৷
সময় মানুষকে কত বদলে দেয়৷ কেরানী থেকে আজ সে ম্যানেজার৷
রাত্রে শুয়ে শুয়ে ভাবছে নন্দিনী, কাউকে কখনো মনে কষ্ট দিতে নেই৷ কষ্টটা ঠিক ফিরে আসে নিজের কাছেই অন্যরূপে অন্য কোনভাবে৷ মনে মনে হয়তো তাকে ভালবাসত আবীর৷ নিজেকে আজ খুব ছোট লাগছে নিজের কাছেই৷
এইযে এতক্ষণ ধরে সে তাকে দেখছিল, যদি সে কাছে এসে বলত..
— "ছেলে দেখলেই খালি তাকানো ? কি রকম মেয়ে মানুষ তুমি ? স্বামিকে ছেড়ে এসে যেই দেখলে হ্যান্ডসাম ছেলে ওমনি পরপুরুষে মজার ইচ্ছে জাগে তাই না ?"
হ্যা, অপমানের প্রতিশোধ সে পারত নিতে৷ আবীর ঠিকই লক্ষ্য করেছিল তার তাকানো৷

আজ দোলের দিন, বসন্ত উৎসব শুরু হয়ে গেছে৷ সবার মনেই আনন্দের ছোঁয়া৷ শুধু নন্দিনী আজ একলা দাঁড়িয়ে বাগানের ফুলগাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে৷ তাকে রং মাখানোর কেউ নেই৷ রঙিন হাতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদর করার কেউ নেই৷ খুব অসহায় লাগছে নিজেকে৷ চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল নরম গাল বেয়ে৷ বাগানের দোলনায় গিয়ে বসল নন্দিনী৷ কোকিলের ডাক শুনতে শুনতে মন খারাপের দোলায় ভাসতে ভাসতে কতটা সময় পেরিয়ে গেল তার খেয়াল নেই৷ হঠাৎ দেখে গাছের কোকিলটা উড়ে গেল ঝাপটা দিয়ে৷ পেছন থেকে হঠাৎ দুটো হাত তার গালে আবীর মাখিয়ে বলল Happy Holi...
ভাবল স্বপ্ন দেখছে নাকি ? না, এবার সামনে এসে দাঁড়াল আবীর৷ 
— "কিছু মনে করলে না তো ? আজকের দিনে এভাবে কেউ একা একা বসে থাকে ?"
কিছু বলতে চাইল নন্দিনী৷ আবীর তার মুখে হাত দিয়ে চুপ করিয়ে বলল...
— "কিচ্ছু বলতে হবে না৷ আমি সব শুনেছি স্যারের কাছে৷ আমি কিছু বলতে চাই আজ তোমায়৷" 
একটু বিরতি নিয়ে বলল..
— "আমি আজও তোমায় ভালবাসি নন্দিনী৷"
আবীরের আবীর মাখান গাল ভরে গেল চোখের জলে৷ আবীরকে জড়িয়ে ধরল নন্দিনী৷ আবার গাছে ডেকে উঠল কোকিলটা৷ ভালবাসার আবেশে মিশে গেল দুটি ঠোঁট৷ উষ্ণ আদরের তৃপ্তিতে ভরে গেল দুটি মন৷ শুষ্ক মাটিতে আবার ঝরে পড়ে ভালবাসার বৃষ্টি৷

                                    ✍ প্রভাত ঘোষ...

꧁ জীবনপিপাসু ꧂