Wanderland

ডঃ হেনরি, কিউবার "সান পেদ্রো" অঞ্চলের বাসীন্দা, পেশা এবং নেশায় এক বৈজ্ঞানিক৷ তার গবেষণাগারটি সমুদ্র সৈকত থেকে কয়েকশ মিটার দূরত্বেই৷ আজ ফিরছেন ভারত থেকে নিজের চাটার্ড প্লেনে করে৷ ভারতীয় বিজ্ঞানী মৃত্যুঞ্জয়ের অকালমৃত্যুর পর তাঁর লেখা থিওরির কপি সরকারের সম্মতিতে আনার জন্যই ভারত ভ্রমন৷

    তখন রাত প্রায় দুটো, গবেষণায় মগ্ন ডঃ হেনরি৷ টেস্ট টিউবের সবুজ তরল টা সযত্নে রেখে সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে নিজের থিওরিটা লেখা শেষ করেই উঠলেন৷ ঠোঁটের হাসি আর মুখের ঊজ্বল্য জানান দিচ্ছে তার এত বছরের গবেষণা সফলতার দোরগোড়ায়৷ লিকুইড ক্লোরোফিল যে মানব রক্তে হিমোগ্লোবিনের বিকল্প হিসেবে এত কার্যকরী হতে পারে তা এতদিন বিজ্ঞানের ধারণার বাইরে ছিল৷ 
আরও বিস্ময়কর জিনিস যা আবিষ্কার করলেন সেটি হল "এপিডার্মিস" স্তরে এই লিকুইড ইনজেক্ট করে মানুষের স্কিনকে ক্লোরোফিল যুক্ত করা৷ থিওরির মূল উদ্দেশ্য মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য যাতে মানুষের শরীরেই তৈরি হবে৷ থিওরি তো রেডি, কিছুক্ষণ আগেই গিনিপিগের স্কিনে ক্লোরাফিল ইনজেক্ট করেছেন, শুধু কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা৷ এটি শিরা উপশিরা হয়ে ছড়িয়ে যাবে সারা শরীরের রক্ত আর এপিডার্মিস স্তরে৷

    গিনিপিগের ওপর পরীক্ষা সফল হয়েছে৷ পরের দিন থিওরির ফাইনাল কপি রেডি করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেছে৷ আকাশ কালো করে এসেছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হল৷
       ঝড় বৃষ্টির রাত, আমেরিকার শহর মেক্সিকো৷ "রজওয়েল" প্রদেশের মরুভূমি অঞ্চলে বিস্ময়কর এক উজ্বল বস্তুর অবিশ্বাস্য গতিতে উড়ে যাওয়া ধরা পড়ল মার্কিন সৈনবাহিনীর ক্যামেরায়৷ সঙ্গে সঙ্গে খবর পৌছে যায় "নাসা"তে৷ রাত বারোটার সময় হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে ডঃ হেনরির ল্যাবে৷
      কথা শেষ করেই নিজের থিওরির ডায়রি নিয়ে রেডি৷ বৃষ্টি তখনো পড়ছে৷ কিছুটা দূরেই নাসার হেলিকপ্টার ল্যান্ড করছে, ব্লেড ঘুরছে ঝড়ের বেগে৷ মস্ত ছাতার তলে বর্ষার বুট নতুন বিস্ময়ের খোঁজে এগিয়ে যায় দ্রুত গতিতে৷ পাইলটের সাথে গল্প করতে করতে ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই পৌছে যান "ক্যালিফোর্নিয়া" শহরের "মাউন্টেন ভিউ" শহরের নাসার হেডকোয়ার্টারে৷
    বৃষ্টি ততক্ষনে থেমে গেছে৷ ভোর চারটের সময় জরুরি মিটিং-এ জমা হয়েছেন তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা৷ রয়েছি আমি "ডঃ জয় ভার্গভ" ওরফে ডঃ জিভাগো, ভারতীয় বিজ্ঞানী ডঃ মৃত্যুঞ্জয়ের সফর সঙ্গী ছিলাম একসময় তার শেষ গবেষণায়৷ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি, এখনো বেশ বিষন্নতা ঘিরে আছে আমাকে৷ চোখের সামনে এত প্রতিভাবান বিজ্ঞানীর মৃত্যু দেখলাম৷ সেই আফ্রিকা সফর এক স্মরনীয় অভিযান হয়ে থাকবে জীবনে৷ যাই হোক, এবার আসা যাক মিটিং এর মূল বক্তব্যে...
    মার্কিন বাহিনীর রিপোর্ট অনুযায়ী রজওয়েলে ওই বিস্ময়কর বস্তুটির গতিবেগ প্রায় ১৫ মাইল প্রতি সেকেন্ডেরও বেশি এবং সে সময় সেনাবাহিনীর দাঁড়িয়ে থাকা প্লেনের রাডারের ভয়ঙ্কর পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে৷ পাঁচটি প্লেনের রাডার ভেঙে গেছে৷ খুব সম্ভবত জোরাল ম্যাগনেটিক ফোর্সের জন্যই এই পরিনতি৷

  জায়গাটিকে পর্যবেক্ষন করার জন্য নাসার একটি দল গঠন করা হল৷ আমি এই মিশনের প্রধান দায়ীত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি৷ বেশ কিছু গোপন ক্যামেরা, মিসাইল এবং স্যাটেলাইটের ফোকাসে রাখা হয়েছে জায়গাটিকে৷ 
শেষ দেখা যাবার ঠিক নয় দিনের মাথায় রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ অটোমেটেড সিগন্যাল জানান দিল "Strong Electro-Manetic Source Found".. লেখাটি ফুটে উঠল কম্পিউটার স্ক্রীনে৷ এলার্ট হয়ে গেলেন সকলেই৷ মিশনের প্রধান উদ্দেশ্য হল ভিনগ্রহীদের বন্দী করা যাতে ভবিষ্যতে তাদের টেকনোলজি পৃথিবীতে ব্যবহার করা সম্ভব হয়৷ এর জন্য বহু বছরের চেষ্টায় মার্কিন গবেষকরা একটি বিশেষ ধরনের মিসাইল তৈরি করেছেন৷ এর বিশেষত্ব হল মারাত্মক শক্তিশালী বিপরীত আয়ন তৈরি করা৷ ব্যপারটা তবে একটু খুলেই বলি...
     অন্যগ্রহের যানে যদি পজিটিভ ম্যাগনেটিক ফিল্ড থাকে তাহলে মিসাইল নিজে থেকেই নেগেটিভ ফিল্ড তৈরি করে নেবে অথবা উল্টোটি৷ এই প্রকৃয়ায় ওই যানটিকে তীব্র আকর্ষনে বেঁধে রাখা যাবে৷ 
     আজ সেই মুহূর্ত, কম্পিউটারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মরুভূমির ঠিক মাঝামাঝি যায়গায় এসে দাঁড়াল যানটি৷ একটু জুম করলেই বোঝা যাচ্ছে তার অদ্ভুত গঠন৷ ঠিক যেন বিশাল এক ব্যাঙের ছাতার মতো এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ এই সময়ের অপেক্ষাতেই ছিলাম, নির্দেশ দিলাম একসাথে সাতটি মিসাইল ছোঁড়ার৷ এমন ভাবে ছোঁড়া হবে যেন ভিনগ্রহী যানটিকে একটি বৃত্তের কেন্দ্র বিন্দুতে রেখে তার চারপাশে সাতটি মিসাইল বৃত্তের পরিধীতে সমান দূরত্ব বজায় রেখে পড়বে৷ কাউন্টডাউন শুরু.. ৭-৬-৫-৪-৩-২-১-০....
সাতটি মিসাইল একসাথে সেকেন্ডের মধ্যে আটকে ফেলল যানটিকে৷ সঙ্গে সঙ্গে তিরিশটি জেট ফাইটার প্লেন ছেয়ে ফেলল রজওয়েলের মরুভূমির আকাশ৷ সব প্ল্যানিং আগে থেকে করাই ছিল৷ অবশেষে ধরা পড়ল ভীনগ্রহী যান৷ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের সমস্ত বাহ্যিক সিগন্যাল বন্ধ করা হল, যাতে ভীনগ্রহীদের সাথে রেডিও সিগন্যাল কাজ না করে৷ কোন ফ্রিকুয়েন্সিই আর কাজ করছে না৷
মরুভূমির একেবারে মধ্যিখানে রয়েছে যানটি৷ অগত্যা হেলিকপ্টারে করেই যেতে হল সবাইকে৷ চারটি হেলিকপ্টার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌছে গেল৷ সবার মনেই স্বাভাবিক ভয়৷ ভিনগ্রহীরা আছে নিশ্চই যানটির ভেতরে৷ এগিয়ে গেলাম আমি, ডঃ হেনরি এবং আরও তিনজন জুনিয়র সায়েন্টিস্ট৷ কিন্তু এ কী!! যানটির দরজা কোথায়? চারিদিক ঘুরেও দরজা খুঁজে পেলাম না কেউই৷ প্রায় দোতলা বাড়ির সাইজের সমান একটি যান, অথচ ভেতরে ঢোকার কোন যায়গা নেই? ডঃ হেনরি এবার হাত নেড়ে ডাকলেন আমাকে কিছু একটা দেখাবার জন্য৷
— ডঃ জিভাগো... "মিস্টেরিয়াস প্লেনের" পায়ে এটা কি? দেখুন তো৷
দেখতে পেলাম একটা সুইচ৷ বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিতেই স্লাইডের মতো অর্ধেকটা খুলে গেল, ঠিক যেমন মেট্রোর দরজা খোলে৷ বেশ ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকলাম দুজনেই৷ ঢুকতেই মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেল দরজা, মনে হল যেন সেন্সর লাগান আছে৷ নীল আলো জ্বলে উঠল৷ বিনা বাধায় উপর দিকে উঠতে লাগলাম৷ এটা নিশ্চিত স্বয়ঙ্ক্রীয় লিফ্ট৷ উপরে উঠেই খুলে গেল লিফ্টের দরজা৷ ওভারকোটের ভেতরের পিস্তলটা বের করে হাতে নিলাম৷ ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম পুরো মিস্টেরিয়াস প্লেন ফাঁকা!! তাহলে কী এটা অটো পাইলট প্লেন?

ডঃ হেনরিকে বললাম..
— কি বুঝছেন?
— সেই তো, ব্যপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না খুব বেশি৷
— যানটি অটো পাইলট তো বটেই, তবে এটি বাইরে থেকে কন্ট্রোল করা হচ্ছে কোন এক উচ্চ তরঙ্গদৈর্ঘের সাহায্যে৷ এখন তো কোন ফ্রিকুয়েন্সি কাজ করছে না৷ তাই এটি পৃথিবীতে আছে এখনো৷ নাহলে বহু আগেই অদৃশ্য হয়ে যেত৷

হঠাৎ কিছু একটা দেখে ডঃ হেনরি বলে উঠলেন..
— এটা কি লেখা আছে দেখুন তো৷
— কই, কোথায়?
— এই যে.. (বলে একটি কম্পিউটার স্ক্রীনের মত একটা দেয়ালের দিকে দেখালেন ইশারায়৷)
— আমি তো দেখে অবাক৷ এ লেখা কেমন যেন চেনা চেনা ঠেকছে৷ ঠিক কোথায় দেখেছি মনে পড়ছে না৷ 
      সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে ক্যামেরাটা বের করে ফটো তুলে নিলাম বেশ কয়েকটা৷ ফটো তুলেই ডঃ হেনরিকে বললাম.. 
— চলুন, এর ভেতর থাকাটা আর নিরাপদ মনে হচ্ছে না৷
    মিনিটের মধ্যেই আবার লিফ্টে করে বাইরে চলে এলাম৷ বাকি সহকারীদের যানটিকে ল্যাবে নিয়ে যাবার নির্দেশ দিতে চোখ ঘোরাতেই নিমেষে উধাউ মিস্টেরিয়াস যান৷
   আমার মুখের দিকে বেশ বিস্ময়ের সাথে তাকালেন ডঃ হেনরি আর বাকি জুনিয়র সায়েন্টিস্টরাও৷ ডঃ হেনরী বলে উঠলেন...
—মনে হচ্ছে আপনি কিছু একটা আঁচ করেছিলেন, তাই কী এত তাড়াতাড়ি নেমে এলেন?
— তা একটু করেছিলাম অবশ্যই৷ আমাদের মিশাইলের এফেক্ট আধঘন্টার বেশি যে থাকবে না সেটা জানতাম৷ আর এই যান যে সুযোগ পেলেই উধাউ হবে তা আঁচ করেছিলাম ভেতরের স্ক্রীনের লেখাগুলো দেখেই৷
— আপনি ওই ভাষা বুঝতে পারলেন?
— ওটা কোন ভাষা নয়, লিপি৷
—মানে?
—যে অাক্ষরিক চিহ্ন ব্যবহারে লেখা হয় তা হল লিপি৷ আর যা বলা হয়, সেটি ভাষা৷ ওই লিপির সাথে ব্রাক্ষ্মী লিপির বিস্তর মিল রয়েছে৷ সব বুঝতে না পারায় ছবি তুলে রেখেছি৷ এবার চলুন আমাদের মস্ত এক মিশনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে৷ 
— কোন মিশন?
— মিশন ওয়ান্ডারল্যান্ড (Wanderland)৷ মঙ্গল অভিযানের জন্য যে স্পেস রকেট তৈরি করা হচ্ছে তাতে কিছু টেকনিক্যাল পরিবর্তন করতে হবে৷

    ঘটনার প্রায় দেড়মাসের মধ্যে আমার সব থিওরি রেডি৷ মিস্টেরিয়াস যান থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে যানটির প্রায় ৬৯॰ দক্ষিণ থেকে পৃথিবীতে ঢুকেছিল৷ সেই অনুসারে আমাদের অভিযানের দিক নির্ণয় করলাম৷ নিউটনের গতিসূত্র অনুসারে মহাশূন্যে যাতে যানের দিক পরিবর্তন করা যায় তার জন্য যানটির পিছন দিকে ভরের স্থানান্তর প্রয়োজন৷ সেই অনুসারে তৈরি হচ্ছে নতুন যান যার নাম W.S.C 234.. পুরো নাম Wonderland Space Craft যা ২৩৪ জন বৈজ্ঞানিকের কঠোর পরিশ্রমের উদ্ভাবন৷

৮ মাস পর : 
*************
       অবশেষে W.S.C তৈরির কাজ সম্পূর্ন৷ ওয়ান্ডারল্যান্ডের খোজের যাত্রার দিন ঠিক হল ৪ঠা জানুয়ারি, স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্মদিন৷ ভোর পাঁচটা, W.S.C তে চেপে বসলাম, আমি, ডঃ হেনরী এবং তিনজন সহকারী বৈজ্ঞানিক৷ সারা বিশ্বের বুকে ইতিহাস তৈরির উদ্দেশ্যে সৃষ্টি এই যান এবং অভিযানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বিশ্বের সব দেশের বৈজ্ঞানিক৷ ভারতে আমার বাড়িতে নিশ্চই এখন সবাই টি.ভি র দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে৷ মনে পড়ছে ছোটবেলার কত স্মৃতি৷ হয়তো এমনই হয়,  অভিযানের ফলাফল, জীবন - মৃত্যু সব যখন এক মূহুর্তে মাথার ভেতর অযূত চিন্তার বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেয়৷ 
     রকেট লঞ্চ হবে, কাউন্টডাউন শুরু.. ১০..৯..৮..৭..৬..৫..৪..৩..২..১..০........
দ্রুতগতিতে রকেট বের হতে জ্বালানির আগুন, ২০মিনিট ধরে শক্তি সঞ্চয় করে ১৪কিমি প্রতি সেকেন্ড গতিতে ছুটে চলল রকেট৷ কম্পিউটার স্ক্রীনে শুভেচ্ছা বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে সবাই৷ এরকম মারাত্মক গতিবেগে লঞ্চার রকেটের স্পেসক্রাফ্টের ভেতরে বসে থাকার অভিজ্ঞতা আমার এবং ডঃ হেনরীরও প্রথম৷ ১মিনিট শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ কেমন যেন চারিদিক খালি খালি মনে হল, ঠিক যেন ভাসছি সবাই শূন্যে ওই WSC র ভেতরে বসেই৷ বুঝতে পারলাম পৃথিবী ছাড়িয়ে এসেছি আমরা পাঁচ বৈজ্ঞানিক৷ কম্পিউটার স্ক্রীনের সামনে আমার পাশেই সীট বেল্টে বাঁধা ডঃ হেনরীর দিকে তাকিয়ে মস্করার ভঙ্গিতে বললাম...
— আমরা কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি ডক্টর৷ বাড়ির জন্য মন খারাপ লাগছে না তো?
— সে তো একটু লাগবেই স্যার, তবে মহাকাশের অভিজ্ঞতাটাই আলাদা৷ হঠাৎ যেন সব কিছু খালি খালি মনে হল৷ জাগতিক সব চিন্তাগুলো হঠাৎ যেন কেউ কেড়ে নিল৷ বাবার অসুখ, বৃদ্ধা মায়ের জন্য দুশ্চিন্তা, একমাত্র বোনের ডিভোর্স, তার ছোট্ট বাচ্চাটার নিষ্পাপ হাসির মায়া.. সব.. সব.. মনে হল  যেন পৃথিবীর সাথে একটা নাড়ীর টান ছিল৷ হঠাৎ কেউ যেন সেই নাড়িটা কেটে আমাকে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিল৷

দেখলাম ডঃ হেনরীর চোখের কোণে একবিন্দু জল জমা হয়েছে৷ আমার মনের অবস্থাও ঠিক ওইরকমই তবে এখন আর কিছু বলা ঠিক হবেনা, এই ভেবে কথা অন্যদিকে ঘোরাবার চেষ্টা করলাম..
— ডঃ হেনরী, আমরা এবার লঞ্চার রকেট থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব৷ আপনি একটু স্ক্রীনের দিকে লক্ষ্য রাখুন, আমি একবার জুনিয়রদের দেখে আসি৷

বলেই নিজের সিটবেল্ট খুলে দিলাম৷ পা পড়ছে না তো নিচে, এ এক অসম্ভব বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা৷ চেয়ারের ওপর ভর দিয়ে ভাসিয়ে দিলাম নিজেকে৷ যাহঃ, আর তো এগোতে পারছি না আগে৷ হাত পা ছুড়ছি, কিছুতেই একফোঁটাও এগোতে পারছি না৷ আমাকে দেখে ডঃ হেনরী হেসে ফেললেন..
— আরে স্যার, ওরকম কাটা মাছের মত ছটফট করছেন যে?
— এ এক বিরাট মুশকিল বুঝলেন, এগোতে পারছি না৷ আপনি একটু হেল্প করুন তো৷ আপনার রিভলভিং চেয়ারটা ঘুরিয়ে আমাকে একটু জোরে ঠেলে দেয়ালের কাছাকাছি পৌছে দিন তো৷

ডঃ হেনরী একটু ঠেলতেই আমি ওপরের দেয়াল ছুঁয়ে ফেললাম৷ এবার সেই দেয়াল ধরে ধরে আস্তে আস্তে এগোচ্ছি৷ একটু কেমন যেন ঝাঁকুনির অনুভব করলাম৷ জুনিয়রদের কাছে যেতেই ওরা জানাল যে লঞ্চার রকেট আমাদের সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে৷ আমরা একটা নির্দিষ্ট দিক ধরে ১৪কিমি প্রতি সেকেন্ড গতিতে এগিয়ে চলেছি৷ নিউটনের প্রথম সূত্র সেই ছোটবেলায় পড়েছি, এই প্রথম অনুভব করলাম৷ জুনিয়রদের সব খবর নিয়ে ফিরলাম ডঃ হেনরীর কাছে৷ কিছু আলোচনার দরকার এখন, আগে থেকেই সব কিছু প্ল্যান করে রাখতে হবে৷

— ডক্টর, এই WSC র ভেতরে যা অক্সিজেন ভর্তি আছে তা দিয়ে সপ্তাহখানেকের বেশি চলবে না৷ তারপর মাস্ক লাগাতে হবে৷ যদিও পর্যাপ্ত সিলিন্ডার আছে, তবু আমাদের মিশনের তো শেষ হবার দিন ঠিক নেই৷ আপনি কি কিছু ব্যবস্থা করেছেন?
— হ্যা, আমার ল্যাবটা জুনিয়রদের কাছেই করেছি৷ একটা বড় মাপের ৫ ফুট বাই ১০ ফুটের কাঁচে ঘেরা জায়গায় মাটি ভর্তি করে তাতে কিছু অর্কিড, চারটে কলম করা নিম গাছ, আর বাকিটা অ্যালোভেরা গাছ লাগান আছে৷ এই কালো  আকাশে ওই অর্কিডগুলো দেখে একটু মন ভরবে, কী বলেন..
— তা ঠিক, তবে শুধু মন ভরানোর জন্য যে আপনি অর্কিড রাখেননি সেটাও নিশ্চিত৷
— হা হা.. তা ঠিকই ধরেছেন৷ এই যতগুলো গাছ আছে তারা সূর্যালোক না থাকলেও কার্বন-ডাই-অক্সাইড খুবই কম বের করে৷ আর আমাদের WSC র অস্কিজেন কয়েক সপ্তাহ নয়, কয়েক মাস যাবৎ পর্যাপ্তই থাকবে৷ (এবার মস্করার ভঙ্গিতে বললেন..) আপনার ফিজিক্সের সাথে আমার বোটানিটাও অন্য গ্রহে ঘুরতে যাচ্ছে , কী বলেন...

দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলাম৷

  ঘন্টাখানেক চোখ রাখলাম কম্পিউটার স্ক্রীনে, WSC র বাইরের সব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এখানে৷ যতক্ষণ আমরা পৃথিবীর মধ্যে ছিলাম এই স্ক্রীনে যাবতীয় কিছু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছিলাম৷ এখন লঞ্চার থেকে বেরোনোর পর পৃথিবীর সাথে ভিডিও লাইভ বন্ধ হয়েছে৷ শুধুমাত্র কথার মাধ্যমেই বার্তা পাঠান যাবে এখন পৃথিবীতে৷ ডঃ হেনরী কী মনে করে জিজ্ঞাসা করলেন...
— আচ্ছা ডঃ জিভাগো, আমরা তো এখন পৃথিবী ছাড়িয়ে বেশ দূরে চলে এসেছি, তাহলে এখন নাসার সাথে যোগাযোগ কি ভাবে করব আমরা? আসলে ফিজিক্সের ব্যপার তো তাই আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি৷ আমার আবার বেশ ভাল লাগে ফিজিক্সের নতুন নতুন ব্যপারগুলো জানতে৷
— হুমম.. আপনারও বেশ আগ্রহ আছে দেখছি ফিজিক্সের ব্যপারে৷ তবে একটু খুলেই বলি৷

   স্ক্রীনের সামনে চেয়ারে পাশাপাশি বসে বলতে শুরু করলাম৷
— দেখুন ডক্টর, এটা তো জানেনই যে যতক্ষন পৃথিবীর মধ্যে ছিলাম ততক্ষণ স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই সবার সাথে লাইভ ভিডিওতে কথা বলছিলাম৷ এবার যখনই পৃথিবী ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম, আমরা DSN এর সাথে যুক্ত হয়ে গেলাম৷
ডঃ হেনরী বেশ কৌতুহলী সুরে বললেন...
— DSN... সেটা কি?
— DSN হল ডিপ-স্পেশ-নেটওয়ার্ক (Deep Space Network) যার সাহায্যে এখন আমরা শুধুমাত্র কথার মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে পারব পৃথিবীর সাথে৷ ভিডিওর মাধ্যমে এখনো যোগাযোগ সম্ভব হয়ে ওঠেনি৷ মানে এখনো আমাদের টেকনোলজিতে সম্ভব হয়নি৷
— আচ্ছা... তা এই DSN কি ভাবে কাজ করে? সিগন্যাল পৌছোবার মাধ্যমটাই বা কি? আমি যতদূর জানি আলো ছাড়া তো আর কোন মাধ্যম নেই এই মহাশূন্যে৷
— হ্যা, আপনার ধারনা অনেকটাই ঠিক৷ তবে আলো ঠিক নয়, কসমিক এনার্জির সাহায্যে সিগন্যাল পৌছাবে এখন পৃথিবীতে৷ 
— কসমিক এনার্জি!!! কথাটা তো বেশ চেনা চেনা লাগছে৷ ওহঃ হ্যা, মনে পড়েছে৷ বেশ কিছু অনলাইন যোগ ব্যয়ামের (Yoga) ভিডিওতে শুনেছিলাম৷ এই কসমিক এনার্জির কথা না কী আপনাদের হিন্দু শাস্ত্রেও পাওয়া যায়? 
— তা আমিও পড়েছি বটে, তবে সত্যিই আগেকার মানুষের মধ্যে কসমিক এনার্জির দ্বারা হত কি না তা আমার জানা নেই৷ তবে শাস্ত্রে বলে এমনটা নাকি হত৷ তা যাই হোক, বিজ্ঞান কিন্তু এখন সেই কসমিক এনার্জি কাজে লাগিয়েই বার্তা পাঠাচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে৷
— বাহঃ.. বাহঃ... এ তো বেশ ইন্টারেস্টিং...
— তা তো অবশ্যই৷ এবারে বলি কিভাবে যায় এই বার্তা৷ ESC, ইউরোপিয়ান-স্পেস-এজেন্সি নামে ইউরোপে একটি সংস্থা আছে, যারা এই নেটওয়াকের সাথে যুক্ত করে৷ সেখানে প্রায় ১৩০টনের একটি এন্টেনা আছে৷ সেখান থেকে সাউন্ডকে কসমিক এনার্জিতে পরিবর্তন করে আমাদের সিগন্যাল পাঠায়৷ আর আমাদের এই WSC তে সেই কসমিক এনার্জি আবার সাউন্ডে পরিনত হয়৷
— বা বা... এ তো মারাত্মক ব্যপার৷ ফিজিক্সে এত রহস্য আছে তা তো আপনাকে না জিজ্ঞাসা করলে জানতেই পারতাম না৷
— হা হা.. তা আপনার বোটানিতে কম কিছু রহস্য আছে না কি? আপনার ওই লিকুইড ক্লোরোফিলের আইডিয়াটা তো মারাত্মক৷ মানুষকে  মানুষ আর গাছের মধ্যবর্তী পর্যায়ে নিয়ে চলে গেলেন৷ তা আপনার ওই আবিষ্কারটির স্বাদ নিতে বেশ ইচ্ছে করছে ডক্টর৷
— আরে মশাই পাগল না কী! সুখে থাকতে ভুতে কিলোবেন না৷ ওটা একেবারে এমার্জেন্সির জন্য রাখা আছে৷ যখন দেখবেন আর কোনভাবেই বাঁচা যাবে না তখন ওটার প্রয়োগ করব৷
— আচ্ছা.. তবে একবার দেখতে খুব ইচ্ছে বস্তুটিকে৷ আর কিভাবে কাজ করে ওই লিকুইড, সেটাও জানতে ইচ্ছে করছে৷
— তবে চলুন আমার ল্যাবের দিকে যাওয়া যাক৷

সিটবেল্ট খুলে দুজনেই নিজেদের শূন্যে ভাসিয়ে দেয়াল ধরে ধরে এগিয়ে পৌছোলাম ডঃ হেনরীর ল্যাবে৷ এই দিকটায় আসার সময়ই পাইনি আগে, কী দারুণ ভাবে সাজিয়েছেন জায়গাটিকে৷ মস্ত কাচের লম্বা বাক্সতে মাটি ভর্তি করে তিন ধরনের গাছ লাগান আছে৷ দেখে মনে হল মাটি একটু বেশিই ভেজা৷ এবার আমাকে ডাকলেন ডক্টর কিছু একটা দেখাবার জন্য৷ একটা ট্রান্সপারেন্ট ফাইবারের বোতলে রাখা সবুজ রঙের তরল, বোতলের ঢাকনাটি রাবারের তৈরি৷ বুঝতে পারলাম এটাই সেই লিকুইড ক্লোরোফিল৷ এবার ডক্টর বলতে শুরু করলেন...
— ডঃ জিভাগো, এই হল সেই লিকুইড৷ এই লিকুইডকে দু জায়গায় ইনজেক্ট করতে হবে৷ প্রথমে শিরার মধ্যে, যাতে রক্তের সাথে মিশে যায়৷ (আমাকে একটু ইতস্তত দেখে বললেন..) ঘাবড়াবেন না, এতে কোন ক্ষতি হবে না৷ লিকুইড ক্লোরোফিল একদম মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মত কাজ করে৷ তবে ঘন্টায় ৩০মিলি লিটারের বেশি ইনজেক্ট না করাই ভাল, কারণ হার্ট এটার সাথে অভ্যস্ত হতে একটু সময় নেবে৷ খুব বেশি হলে সব মিলিয়ে ১৮০মি.লি পর্যন্ত নেওয়া যাবে তাও আবার ৬ঘন্টায়৷ এরপর দ্বিতীয় জায়গা হল এপিডার্মিস স্তর৷ ট্রাইসেপের ওপরে ০.৭৫মি.মি সূচ ঢুকিয়ে ইনজেক্ট করতে হবে৷ তার জন্য আলাদা সিরিঞ্জ রয়েছে৷ এর কারন মানুষের চামড়া সবচেয়ে বেশি পুরু হয় পায়ের পাতায় যা প্রায় ১.৫০মি.মি, আর চোখের করোণিতে সবচেয়ে পাতলা, প্রায় ০.০৫মি.মি৷ সেই হিসেবেই সূচ ব্যবহার করতে হবে৷ ইনজেক্ট করার ২৪ঘন্টার মধ্যেই সবুজ হয়ে যাবে সেই মানুষের রং৷ এই পর্যন্ত বলে থামলেন ডঃ হেনরী৷

বেশ কয়েক ঘন্টা কেটে গেছে, জল তেষ্টাও পাচ্ছে৷ WSC র রান্নাঘরের দিকে এলাম দুজনেই৷ এখানে রান্নাঘরে শুধু শুকনো খাবার (Dry Fruits) আর জলের পাউচ রাখা আছে কয়েক হাজার৷ একটা পাউচ খুলে চাপ দিলাম৷ পাউচের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল জলের বেশ বড় একটা ফোঁটা৷ বিস্ময়কর ব্যপার হল ফোঁটাটি শূন্যে ভেসেই রয়েছে, চোখের সামনে৷ ডঃ হেনরীকে দেখালাম ব্যপারটি, তারপর মুখ দিয়ে গিলে ফেললাম জলের ফোঁটাটিকে৷ দুজনেই এই প্রথম অভিজ্ঞতায় বেশ মজা পাচ্ছি৷ 
    পৃথিবীর হিসেবে প্রায় ঘন্টা দশেক কেটে গেছে এভাবেই৷ পুরো স্পেসক্রাফ্ট পরিদর্শন হয়ে গেছে৷ সারা শরীরে কেমন যেন ম্যাজম্যাজে ভাব৷ ঘুম ঘুম পাচ্ছে ঠিকই, তবে কিভাবে ঘুমাবো সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না৷ অবশেষে সীট বেল্টে নিজেদের বেঁধে সীটটাকে বিছানার মতো শুইয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম৷ দুজন জুনিয়র জেগে পর্যবেক্ষণ করছে৷ আমরা ঘুমিয়ে উঠলে ওরা ঘুমোবে৷

    এভাবেই কাটল পাঁচ সপ্তাহ৷ মাঝে মাঝে নাসার সাথে কথা এবং নিজেদের সঠিক অবস্থানের জানান দিচ্ছি৷ ডঃ হেনরীর সাথে বসে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আছি৷ কত লক্ষ লক্ষ গ্রহ, উপগ্রহের ছবি ফুটে উঠছে স্ক্রীনে৷ লক্ষ লক্ষ বিশাল পাথরের মত কিছু ভেসে বেড়াচ্ছে মহাকাশে, সূর্যের আলো পড়ে দৃশ্যমান করে তুলছে বস্তুগুলিকে৷ আমরা বেশ নিপুণভাবে পাশ কাটিয়ে চলেছি৷ যদিও কিছু অটোমেটিক ব্যবস্থা আছে৷ WSC র চারিদিক থেকে কসমিক রশ্মি ( Cosmic Ray) বের হচ্ছে যার প্রধান উপাদান হল প্রোটন কণা৷ এই কসমিক রশ্মির সাহায্যে সামনে কোন বস্তুর অবস্থানের বার্তা পৌছে যায় WSC র প্রধান সার্ভারে৷ এভাবেই অটো কন্ট্রোল হয়৷ হঠাৎ প্রায় দেড় মাসের মাথায় কম্পিউটার স্ক্রীনে ফুটে উঠল বাহ্যিক ম্যাগনেটিক ফিল্ডের অবস্থানের সংকেত৷ এক জুনিয়র বলল..
— স্যার কাছাকাছি কোন ম্যাগনেটিক ফিল্ডের অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে৷ 
    সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিলাম ওই ম্যাগনেটিক ফিল্ডকে লক্ষ্য করে এগিয়ে চলতে৷ WSC র ভেক্টর পরিবর্তন করা হচ্ছে, ফলে গতানুগতিক দিকে এগিয়ে চলা হচ্ছে না৷ এই অবস্থায় আপাতত পৃথিবীর সাথে যোগাযেগও প্রায় অসম্তব৷ তবুও একটা বার্তা পাঠিয়ে রাখলাম, যদি যোগাযোগ হয় সবার প্রথমে আমার বার্তাটাই পৌছাবে৷ স্ক্রীনে হঠাৎ বেশ কয়েটা ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করলাম৷ আমাকে বেশ চিন্তিত দেখে ডঃ হেনরী জিজ্ঞাসা করলেন...
— স্যার, বড় কোন অসুবিধে হয়েছে না কি? 
— (স্ক্রীনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললাম) কিছু বুঝতে পারছেন?
— নাঃ.. এসব তো আমি খুব একটা বুঝি না, তবে আপনার সাথে থেকে এটুকু বুঝতে পারছি আমরা ছাড়াও অন্য কিছু রয়েছে আমাদের কাছাকাছি যার বার্তা আসছে স্ক্রীনে৷
— একদম ঠিক ধরেছেন ডক্টর, আমাদের ফলো করা হচ্ছে৷ বেশ বড়সড় কিছু একটা ঘটতে চলেছে মনে হচ্ছে৷ চারিদিক থেকে আমাদের ঘিরে ফেলেছে ওরা৷
— ওরা!!! ( আঁতকে উঠলেন ডঃ হেনরী )
— হ্যা, ওরা৷ মানে এলিয়েন৷
— তার মানে আমরা এলিয়েনের খোঁজ পেয়ে গেছি!! ( আনন্দে যেন নেচে উঠলেন)
— তা হয়তো পেয়েছি, কিন্তু আমরা এখানে ওদের সাথে কতটা কী করতে পারব তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ তবে ওদের গ্রহে পৌছোতে পারলে আর সেখান থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে এই অভিযান অনেকখানি সফল হবে৷

     এবার WSC র তিন দিকের তিনটি ক্যামেরা চালু করে দিলাম৷ কিন্তু কই! কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না তো সেরকম বিস্ময়কর, তবুও আগের মতই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের উপস্থিতি জানা যাচ্ছে৷ বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম এবার৷ হঠাৎ মাথায় এল একটা বহুদিন আগের কথা৷ ডঃ হেনরীকে বললাম... 
— ডক্টর, এখন কিন্তু ক্যামেরা চালু আছে৷ স্ক্রীনে চোখ রাখুন তো, দেখুন কিছু ভিনগ্রহী যান চোখে পড়ছে কি না৷
— ( কিছুক্ষণ পরে বললেন) কই সেরকম তো কিছু ফলো করছে বলে তো মনে হচ্ছে না৷ তবে যা মনে হচ্ছে ওদের যানের গতিবেগ বাড়ানো বা কমানোর ব্যবস্থা আছে৷ কারণ অবস্থান ও দিকের বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ তবে ক্যামেরায় কিছু ধরা পড়ছে না কেন বলুন তো?
— সেটা আমিও এতক্ষণ ভাবছিলাম৷ (এবার আমার প্রায় একমাস যাবৎ বন্ধ থাকা ল্যাপটপটা চার্জে লাগিয়ে চালু করলাম৷ একটা পি.ডি.এফ ফাইল খুলে ডঃ হেনরীকে দেখালাম৷) এটা পড়ে কি কিছু বুঝতে পারছেন? দেখুন তো..
— (কিছুক্ষন পড়ার পর বেশ বিস্ময়ের সাথে বললেন..) এ তো দেখছি ভারতের কোন পৌরানিক গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ৷
— ঠিক ধরেছেন৷ এর আসল নাম হল "বৈমানিক শাস্ত্র", যা লিখেছিলেন "ঋষি ভরদ্বাজ" আজ থেকে আনুমানিক পাঁচ হাজার বছরেরও আগে৷ এই গ্রন্থের সম্পূর্ণ অংশ পাওয়া যায়নি৷ তক্ষশীলা মহাবিদ্যালয়ে থাকা এরকম বহু নথি, বহু গ্রন্থ হুন জাতি ধ্বংস করে দিয়েছে৷ এখানে দেখুন, কিছুটা লেখা আছে কোন বিমানকে অদৃশ্য করার সাধারন নিয়ম বা পদ্ধতি৷ 
— তাই নাকি? তা কিভাবে করা যায়?
— এমন ভাবে বিমান বা মহাকাশযান তৈরি করতে হবে এবং কোন এক বিশেষ টেকনোলজির দ্বারা যদি বাইরে থেকে যে আলো বিমানে পড়ছে তা সুকৌশলে ঠিক একই কৌণিক ডিগ্রিতে সরলরেখায় যদি বাইপাস করে আনা যায় তবে ওই যানে কোন আলোক রশ্মি ধাক্কা খাবে না৷ অতএব ওই যানটিকেও আর দেখা যাবে না৷
— ( ঠিক হাঁ... হয়ে ডঃ হেনরী শুনছিলেন এতক্ষণ৷ আমার কথা শেষ হতেই বললেন...) তার মানে ওরা সেই টেকনোলজিই ব্যবহার করছে? ভারতের ওই গ্রন্থে লেখা টেকনোলজির কথা ওরা জানলোই বা কি করে? আবার এর মানে দাঁড়াল এই যে "রাইট ব্রাদার্স" প্রথম বিমান আবিষ্কার করেন নি৷
— ঠিক তাই৷ তবে এলিয়েনরা ওই টেকনোলজি কোথায় পেল তা কিন্তু আমারও অজানা৷ এবার বিজ্ঞান আর ফিলজফিকে যদি একসাথে নিয়ে বিচার করা হয়, তাহলে এটাই দাঁড়ায় যে রাইট ব্রাদার্স বিমান তৈরির বেশ কিছু তথ্য ভারত থেকেই নিয়ে গেছিলেন৷
— তাহলে এবার কি করবেন?
— শুধু লক্ষ্য রাখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই৷ আমাদের সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে৷

꧁ জীবনপিপাসু ꧂