꧁ জীবনপিপাসু ꧂

    ভাদ্রমাসে খটখটে রোদ, জনশূন্য প্রায় এক কলোনির ব্যালকনি থেকে কিছু দূরে দেখা যায় ঘোলা জল বয়ে যাওয়া মস্ত এক জোড়৷ এই জোড় কথাটা মনে এলেই অরুণিতা বসু থেকে একপলকায় অরু হয়ে পৌঁছে যায় বহুদিন না দেখা সেই ধবলডাঙা গ্রামে৷
বাঁকুড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতা শহরের ছোট্ট ফ্ল্যাটে ওঠা, তারপর বহু স্মৃতি, প্রেম আর বাদ-বিবাদের সাক্ষি হয়ে আছে তার ছোট্ট ব্যালকনি৷

সে তখন কৈশোরের প্রথম অধ্যায়, গ্রাম পেরিয়ে অন্য গ্রামে স্কুল, সাইকেল চড়ে পড়তে যেত অরু৷ আর কেউ থাকুক না থাকুক একজন সঙ্গী তার বরাবরই ছিল— অনিমেষ৷ কোনো কোনোদিন দেরি হয়ে গেলেও অনি কিন্তু অরুকে ফেলে কখনোই একা স্কুলে যায়নি৷ বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে হলেও অনিমেষের মনটা ছিল অত্যন্ত সরল৷

বন্ধুত্ব আর ভালবাসা কেন যে কখনো এত দু-পাড়ের ব্যক্তি হয়ে যায়!

স্কুল থেকে কলেজের দিন— যেন কী দারুণ রঙিন আর শরতের আকাশের মতো ছিল আধছোঁয়া প্রেম৷ কখনো বলেনি কেউ কতখানি ভালবাসা ভেসেছিল অলিখিত জলে৷

এত প্রেম, শুভ্র মেঘ, কাশফুল, ঘাসেদের মেলা... এতকিছু দেখতে দেখতে দুজনার কলকাতা পাড়ি৷ মা বলত— শোন অরু, সব ভাল চিরকাল জীবনে থাকে না.. কিছু কিছু বুকে থেকে যাওয়াই ভাল আজীবন৷ তখন হয়তো সে বুঝতে পারেনি, আজ পারে৷ আগলে রাখা আর আটকে রাখার মাঝে এক বিশাল ফারাক, প্রথমটায় প্রেম থাকে বন্ধনের মতো আর দ্বিতীয়টি শুধু এক শুকনো অধিকার, যেন এক লিখিত দলিল৷ তাই হয়তো ধরে রাখতে পারেনি সে অনিমেষকে৷ হয়তো বা চায়নি কখনো৷

মাঝে মাঝে মনে পড়ে সে আর অনি একসাথে এই ফ্ল্যাটে এখানেই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই কত রাত শুধু চাঁদ দেখে দেখে কাটিয়ে ফেলেছে... ভোর রাতে জড়িয়ে ধরেছে ঘন ঘুমে৷

তারপর একদিন দেখেছিল অরুণিতা বসু তার প্রিয় অনিমেষকেই— সেই চেনা ঘুমন্ত মুখ, মুখে সারল্যের ছাপ৷ হঠাৎ ঝড়ের মতো ট্রেন অথবা ট্রেনের রূপে ঝড় এসে মরুভূমি দিয়ে গেল তাকে৷ এ কোন্ বিধাতা এক জীবনপিপাসু... চব্বিশ বছর পরে আজও একা বসে থাকে অরুণিতা বসু৷

©প্রভাত ঘোষ

꧁ জীবনপিপাসু ꧂